মুম্বইয়ের এক ডাকসাইটে গণিকার জীবনকাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালক বানশালির সিনেমা ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি’। ঘোষণা হবার পর থেকেই জনা কয়েক লোক আপত্তি তোলে।
এমনকী মুক্তি আটকে দেওয়ার দাবি তুলে আদালতে মামলাও করে। কোর্টের তরফে সমন পাঠানো হয়েছিল পরিচালক সঞ্জয়লীলা বনশালি ও অভিনেত্রী আলিয়া ভাটকে।
মামলাকারী দাবি করেছিলেন যে তিনি গাঙ্গুবাইয়ের দত্তক সন্তান। যদিও আদালতে তথ্য-প্রমাণাদির অভাবে সেই মামলা ধোপে টেকেনি।
শেষমেশ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি’।
সাতের দশকের মাঝামাঝি গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি মারা যান। তাঁর নিজের কোনও সন্তান ছিল না। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন দাবি করেছিল যে, তাদের নাকি গাঙ্গুবাই নিজে দত্তক নিয়েছিলেন। এদেরই একজন আদালতে গিয়েছিলেন।
কে ছিলেন গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ি, কেন তাঁর বায়োপিক নিয়ে আইনি জটিলতা?
গুজরাতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক মহিলা। যাঁর আসল নাম গঙ্গা হরজীবনদাস কাঠিয়াওয়াড়ি। ষাটের দশক নাগাদ
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেয় তার স্বামী যৌনপল্লিতে!
মুম্বইয়ের কুখ্যাত যৌনপল্লী কামাথিপুরাতে বিক্রি হয়েছিলেন। তারপর হয়ে ওঠেন কামাথিপুরার ডাকসাইটে মহিলা। অনেকের কাছেই ‘মুম্বই মাফিয়া কুইন’ নামে পরিচিত হন, যাঁর অনুমতি ছাড়া কামাথিপুরার অন্ধকার গলিতে যেমন সূর্যের আলো ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল, ঠিক তেমনই গাঙ্গুবাইয়ের অঙ্গুলি হেলন ব্যতীত কোনও কাক-পক্ষীর প্রবেশের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু একদিনে এই অসাধ্য সাধন হয়নি। সেই যৌনপল্লীর গণিকাদের অধিকারের জন্য তিনিই প্রথম মুখ খুলেছিলেন।গাঙ্গুবাঈ কাঠিয়াওয়াড়ির খ্যাতনামা হওয়ার নেপথ্যের বেশ কয়েকটা কারণ হুসেন জায়েদির ‘মুম্বই মাফিয়া ক্যুইন’ বইতে লেখা রয়েছে। সমাজে গণিকাদের অধিকারের জন্য লড়া থেকে শুরু করে তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজে গিয়ে কথা বলা, সমাজে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেইজন্য গাঙ্গুবাঈ একাই লড়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, অধিকার আদায়ও করে নিয়েছিলেন। আর তাঁর অদম্য লড়াইয়ের জন্যই রাজনৈতিক দলেও ডাক পেয়েছিলেন।
গাঙ্গুবাঈ যেসময় মুম্বাইয়ে আসেন সেই সালটা ছিল ১৯৬০, সেই সময়ে মুম্বাইয়ের সবথেকে নামী এবং ভয়ঙ্কর মাফিয়া ছিল করিমলালা, হাজি মস্তান ও ভরদারাজন। সারা মুম্বাই শহর জুড়ে তখন এই তিনজন মাফিয়ার রাজ। করিমলাল এর দলের একাধিক গুন্ডা গুঙ্গীবাইকে ধর্ষণ করেছিল। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। শেষমেষ করিমলালার সঙ্গে দেখা করেন গুঙ্গু। তার এই অদম্য মনোভাব জয় করে নিয়েছিল করিমলালার মন। তারপর থেকেই গুঙ্গিবাইকে নিজের বোনের জায়গা দিয়েছিলেন তিনি। প্রতি বছর রাখিতে গঙ্গুর হাত থেকে রাখি পরতেন।
ছবিতে করিমলালার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অজয় দেবগনকে।
No comments:
Post a Comment